আরাফা দিবসের রোজার ফজিলত ও তারিখ বিভ্রাট নিরসন
কোরআনুল কারীমে আল্লাহতায়ালা বলেন: ঊষার শপথ! আরো শপথ (জিলহজ মাসের প্রথম) দশ রজনীর! এবং শপথ জোড় (ঈদের দিন) ও বেজোড় (আরাফার দিন) এর। (সূরা-৮৯ ফজর, আয়াত: ১-৩, ই.ফা.)।
জিলহজের ৮ থেকে ১৩ তারিখ হজের কার্যক্রম, ৯ থেকে ১৩ তারিখ আইয়ামে তাশরীক, ৯ তারিখ হজ, ১০ তারিখ ঈদ, ১০ থেকে ১২ তারিখ কোরবানি এবং ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ আইয়ামে বীদ এর রোজা, যা প্রতি মাসেই রয়েছে। এক সাথে এত অধিক ও বৈচিত্র্যপূর্ণ ইবাদত অন্য কোনো মাসে দেখা যায় না।
প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি আশা করি আরাফাতের দিনের রোজার বদলায় আল্লাহতাআলা বিগত ১ বছরের ও পরবর্তী ১ বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন। (সহীহ মুসলিম ও তিরমিযী, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ১৫৮)।
আরাফার দিন হল ইয়াওমুল আরাফা বা ৯ জিলহজ, যেদিন হাজীরা হজের প্রধান ফরজ অকুফে আরাফা বা আরাফা প্রান্তরে অবস্থান করে থাকেন।
সারা পৃথিবীতে চান্দ্র তারিখের হিসাব চারভাবে হয়ে থাকে। এক. স্থানীয়ভাবে চাঁদ দেখে, দুই. মক্কা-মদিনা বা সৌদি আরবের সাথে, তিন. পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে প্রথম চাঁদ দেখার সংবাদের ভিত্তিতে, চার. জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাবের মাধ্যমে।
এ কারণে সারা পৃথিবীতে একটি চান্দ্র মাসের দুটি বা তিনটি তারিখ দেখতে পাওয়া যায়। ফলে এক দেশের সাথে অন্য দেশের চান্দ্র তারিখ একদিন বা দুই দিন ব্যবধান হয়ে থাকে।
মুজতাহিদ ফকীহগণের সিদ্ধান্তে এর যে কোনো একটি মতে আমল করলে উক্ত সওয়াব পাওয়া যাবে, ইনশাআল্লাহ!
বাংলাদেশে কার্যত চান্দ্র তারিখের ২টি ধারা চালু আছে। প্রথমটি হলো- স্থানীয়ভাবে চাঁদ দেখে তারিখ নির্ধারণ করা; দ্বিতীয়টি হলো- সৌদি আরবের তারিখের অনুসরণ করা।
প্রথম মতের ফকীহগণের বক্তব্য হলো: ইয়াওমুল আরাফা বা আরাফার দিন হলো জিলহজ মাসের ৯ তারিখ। সুতরাং পৃথিবীর যেখানে যখন জিলহজ মাসের ৯ তারিখ হবে সেখানকার অধিবাসীদের জন্য সেদিনই আরাফার দিন অর্থাৎ ইয়াওমুল আরাফা।
জিলহজ মাসের ৯ তারিখই হলো আরাফার দিন বা ইয়াওমুল আরাফা। যেমন- জিলহজ মাসের ৮ তারিখকে ইয়াওমুত তারবিয়াহ এবং ১০ তারিখকে ইয়াওমুন নাহার বা কোরবানির দিন বলা হয়। অনুরূপভাবে ৯ তারিখ হলো ইয়াওমুল আরাফা বা আরাফার দিন।
দ্বিতীয় মতের আলেমগণের ব্যাখ্যা হলো: আরাফার রোজার ফজিলত সংক্রান্ত হাদিসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো তারিখ উল্লেখ করেননি, বরং নির্দিষ্ট একটি বিশেষ দিনের উল্লেখ করেছেন; আর সেদিনটি হলো আরাফার দিন অর্থাৎ হজের দিন, যে দিন হাজীগণ আরাফা ময়দানে অবস্থান করেন।
সুতরাং ৮ বা ৯ তারিখ নয় বরং হজের দিনই রোজা রাখতে হবে। হজ যেহেতু পৃথিবীতে শুধুমাত্র এক জায়গায় মক্কা শরীফেই অনুষ্ঠিত হয়, তাই সারা পৃথিবীতে সেই হজের দিনই আরাফার রোজা প্রতিপালিত হবে।
কারণ এই রোজাটি তারিখের সাথে সম্পর্কিত নয়, স্থান ও কর্মের সাথে সম্পর্কযুক্ত। আর তা হলো মক্কা ও হজ।
এক থেকে নয় তারিখ রোজা পালন করলে এর মধ্যেই আরাফার রোজা পালন হয়ে যাবে, এটাই সর্বোত্তম। নয়টি রোজা না রাখলেও আট ও নয় তারিখ দুটি রোজা করলেও আরাফার রোজা আদায় হয়ে যাবে- এটা নিরাপদ।
যদি কেউ একটিমাত্র আরাফার রোজা রাখতে চান, তিনি উপর্যুক্ত বিশ্বব্যাপী অনুসৃত চারটি মতের বা বাংলাদেশে প্রচলিত দুটি মতের যে কোনো একটি অনুযায়ী ইখলাস ও তাকওয়ার সাথে আমল করলে পূর্ণ সওয়াব প্রাপ্ত হবেন।
হাদিস শরীফে রয়েছে- ‘কাজের ফলাফল নিয়াতের ওপর নির্ভরশীল’। (বুখারি ও মুসলিম)।
যারা যেই মতকে অধিক প্রামাণ্য ও যুক্তিসঙ্গত মনে করবেন ও তা অনুসরণ করে আন্তরিক অনুরাগের সাথে আমল করবেন, তারাই এই সওয়াবের অধিকারী হবেন। তবে মুজতাহিদ ফকীহগণ গবেষণার ক্ষেত্রে দলিল প্রমাণ ও যুক্তি-তর্কে অন্য মতের বিরোধিতা বা খণ্ডন করতে পারবেন।
কিন্তু কোনো সাধারণ মানুষ ভিন্নমতের বিরোধিতা করা অশোভন ও অনুচিত এবং পক্ষাবলম্বন ও সমালোচনা অন্যায়, যা অনধিকার চর্চার শামিল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন